alt

জাতীয়

লোডশেডিং ‘আরও বেশ কিছুকাল’ থাকবে বলে মনে করে সিপিডি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

চলমান সংকট থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোন শিক্ষা নেয়নি বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির দাবি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত এখনও ভুল পথে এগোচ্ছে। সিপিডি বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়েনি। লোডশেডিং শীঘ্রই যাবে না। আরও বেশ কিছুকাল থাকবে বলেই শঙ্কা। গ্রামে ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ : প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব চ্যালেঞ্জ জায়গা পেয়েছে কি?’ শীর্ষক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমীক্ষায় এসব কথা বলেছে সিপিডি। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সমীক্ষাটি উপস্থাপন করা হয়।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়সহ যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো সমস্যার সমাধানে কাজে আসেনি বলেও মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির নিবন্ধে বলা হয়, চলমান সংকট থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোন শিক্ষা নেয়নি। এটি এখনো ভুল পথে এগোচ্ছে। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি নির্ভরতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট সমাধান হবে না। এতে শুধু ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে ভোক্তার ওপর বাড়তি দাম চাপাতে পারে। আইএমএফের পরামর্শের পাশাপাশি আরও অনেক সংস্কার করতে হবে।

সিপিডির নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সঞ্চালনাও করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে আগে থেকে যা যা শঙ্কা করা হয়েছিল, তা এখন পরিণতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানি বাজারে পরিণত হয়েছে। এখন ডলারের অভাবে জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। জ্বালানিসংকটে গত এক বছরে লম্বা সময় ধরে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, আদানির বিদ্যুৎ, আন্তঃসীমান্ত সঞ্চালন লাইন, এলএনজি, কয়লাসহ সব মিলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানির বাজারে পরিণত হয়েছে। ভোক্তা বাড়তি দাম দিয়েই যাচ্ছে। সেই টাকায় বড় বাজেট হচ্ছে। অথচ বাজেটে ভোক্তার জন্য কিছু নেই। বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়নের নামে কত টাকা পাচার হয়ে গেছে, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে জ্বালানির মূল জোগান আসে গ্যাস থেকে। গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে গেলে বর্তমান সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়। গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। এমন অবহেলার শাস্তি তো পেতেই হবে। আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন গ্যাসসংকট তৈরি করা হয়েছে। এতে এলএনজি আমদানি বাড়তেই থাকবে।

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি খাতে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে বিদ্যুৎ খাতে। গত বছর সংকটে পড়ে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এখন বিশ্ববাজারে কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম কম। তাই সরকার আবার আমদানির দিকেই ঝুঁকছে। জ্বালানির নিশ্চয়তা না নিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। এগুলো তো যেকোন আইনে অবৈধ হওয়ার কথা।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে পারায় শিল্পায়ন বেড়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের কাছে পরিস্থিতি অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে। জ্বালানির প্রাপ্যতা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ডলারের সংকটে ঠিকমতো ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরাও ঋণপত্র খুলতে পারছেন না।

সিপিডির নিবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন বন্ধ আছে। জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ ঋণ করা হচ্ছে জ্বালানি খরচ মেটাতে। এর মধ্যে কয়লা নির্ভরতা বাড়ছে। এটি আমদানি খরচ আরও বাড়াবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৪০ শতাংশ বাড়তি আছে। আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এত বাড়তি সক্ষমতা দিয়ে কী করা হবে?

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসানের অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায় পিডিবির খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরের বছর (২০২১-২২) এটি প্রায় ৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এটি ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লে এটি বাড়তেই থাকবে। ২০২৫ সালে অতিরিক্ত সক্ষমতা ৪৬ শতাংশ হবে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া কমানোয় জোর দেয়া উচিত।

সিপিডির নিবন্ধে আরও বলা হয়, শুল্ক ও কর বাবদ বিপিসি সরকারি কোষাগারে টাকা দিচ্ছে। আবার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প নিচ্ছে। অথচ লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে। এসব হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। দাম বাড়িয়ে বিপিসি মুনাফা করেছে। কিন্তু তা দিয়ে তো জ্বালানি তেল আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানির জন্য ডলার লাগবে। সামনে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়তে পারে। উচ্চমূল্যে কত দিন জ্বালানি কেনা সম্ভব হবে? গ্যাসঘাটতি উত্তরোত্তর বাড়ছে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মানে জ্বালানি আমদানি খরচের বড় অংশ যাবে এলএনজি খাতে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন বলেন, ‘একদিকে লোকসান, অন্যদিকে ফিক্সড অ্যাসেটে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়ার পাশাপাশি লোকসানের অজুহাতে জনগণের কাছ থেকে ট্যারিফ মূল্য বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এটা একটা গোলমেলে হিসেব। বিপিসি, পিডিবি ও পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।’

দায়িত্ব বহির্ভূত কার্যক্রম,সিলেটের ডিসিকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ আদালতের

ছবি

সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজন করবে ক্যাথলিক চার্চ

ছবি

দেশে ফিরেছেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে দলগুলোর ঐক্য চান আলী রীয়াজ

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার এখনো মানুষের কাছে ভালো সমাধান মনে হয়: মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত, অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার

ছবি

টঙ্গীতে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় শ্রমিক বিক্ষোভ

রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি ১৮ মে

ছবি

শিক্ষার্থীদের নিয়ে থানার কার্যক্রম পরিদর্শন

ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু

ছবি

আড়াই মাসেও অপহৃত লিখনের সন্ধান মেলেনি

নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার অনন্তলোকে

ছবি

২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের নাম

ছবি

ওষুধ কেনার অর্থ নেই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের

ছবি

বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়া চলছে

ছবি

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে নিহতের কন্যার আত্মহত্যা

১৭ হাজার ৭৭৭ জন মালয়েশিয়া যেতে না পারার ‘সব দায়’ রিক্রুটিং এজেন্সির

ছবি

আরেক হত্যা মামলা : হাসিনার সঙ্গে অভিনেতা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ আসামি ৪০৭

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

আইএমএফের ঋণে অনিশ্চয়তা, ‘আর্থিক’ সংকট না হলেও ‘ইমেজ’ সংকটের আশঙ্কা

পাঠ্যবই মুদ্রণ: কাগজ আমদানি নিয়ে ‘ত্রিমুখী’ অবস্থান

ছবি

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বাংলাদেশ চায় ভারত-পাকিস্তান সমস্যার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

গুজরাটে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি

ছবি

দক্ষিণাঞ্চলের গ্রিড বিপর্যয়ে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জনগণের কাছে গিয়ে দ্বিমতের সমাধান খুঁজতে হবে: জোনায়েদ সাকি

ছবি

জয়কে অপহরণ-হত্যাচেষ্টা মামলা: শফিক রেহমানের খালাসে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি নেই

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ৪ মে

ছবি

পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে রোম ছেড়েছেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

পটুয়াখালীতে ধর্ষণের শিকার শহীদকন্যার ঢাকায় আত্মহত্যা

ছবি

‘ভিত্তিমূল্য’ নির্ধারণ করে পুনর্মূল্যায়ন হবে বিদ্যুতের দাম: উপদেষ্টা

ছবি

আন্দোলনের মধ্যে ইউআইইউতে ভিসিসহ ১২ জনের পদত্যাগ

রাজধানীতে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার বাসার নিরাপত্তাকর্মী

শাহজালালে পোশাকে লেপ্টে ৫ কোটি টাকার স্বর্ণ পাচারে যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

কেমন আছেন সিলেট অঞ্চলে খাসিয়ারা

tab

জাতীয়

লোডশেডিং ‘আরও বেশ কিছুকাল’ থাকবে বলে মনে করে সিপিডি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

চলমান সংকট থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোন শিক্ষা নেয়নি বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির দাবি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত এখনও ভুল পথে এগোচ্ছে। সিপিডি বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়েনি। লোডশেডিং শীঘ্রই যাবে না। আরও বেশ কিছুকাল থাকবে বলেই শঙ্কা। গ্রামে ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ : প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব চ্যালেঞ্জ জায়গা পেয়েছে কি?’ শীর্ষক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমীক্ষায় এসব কথা বলেছে সিপিডি। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সমীক্ষাটি উপস্থাপন করা হয়।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়সহ যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো সমস্যার সমাধানে কাজে আসেনি বলেও মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির নিবন্ধে বলা হয়, চলমান সংকট থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোন শিক্ষা নেয়নি। এটি এখনো ভুল পথে এগোচ্ছে। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি নির্ভরতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট সমাধান হবে না। এতে শুধু ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে ভোক্তার ওপর বাড়তি দাম চাপাতে পারে। আইএমএফের পরামর্শের পাশাপাশি আরও অনেক সংস্কার করতে হবে।

সিপিডির নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সঞ্চালনাও করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে আগে থেকে যা যা শঙ্কা করা হয়েছিল, তা এখন পরিণতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানি বাজারে পরিণত হয়েছে। এখন ডলারের অভাবে জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। জ্বালানিসংকটে গত এক বছরে লম্বা সময় ধরে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, আদানির বিদ্যুৎ, আন্তঃসীমান্ত সঞ্চালন লাইন, এলএনজি, কয়লাসহ সব মিলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানির বাজারে পরিণত হয়েছে। ভোক্তা বাড়তি দাম দিয়েই যাচ্ছে। সেই টাকায় বড় বাজেট হচ্ছে। অথচ বাজেটে ভোক্তার জন্য কিছু নেই। বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়নের নামে কত টাকা পাচার হয়ে গেছে, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে জ্বালানির মূল জোগান আসে গ্যাস থেকে। গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে গেলে বর্তমান সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়। গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। এমন অবহেলার শাস্তি তো পেতেই হবে। আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন গ্যাসসংকট তৈরি করা হয়েছে। এতে এলএনজি আমদানি বাড়তেই থাকবে।

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি খাতে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে বিদ্যুৎ খাতে। গত বছর সংকটে পড়ে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এখন বিশ্ববাজারে কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম কম। তাই সরকার আবার আমদানির দিকেই ঝুঁকছে। জ্বালানির নিশ্চয়তা না নিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। এগুলো তো যেকোন আইনে অবৈধ হওয়ার কথা।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে পারায় শিল্পায়ন বেড়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের কাছে পরিস্থিতি অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে। জ্বালানির প্রাপ্যতা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ডলারের সংকটে ঠিকমতো ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরাও ঋণপত্র খুলতে পারছেন না।

সিপিডির নিবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন বন্ধ আছে। জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ ঋণ করা হচ্ছে জ্বালানি খরচ মেটাতে। এর মধ্যে কয়লা নির্ভরতা বাড়ছে। এটি আমদানি খরচ আরও বাড়াবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৪০ শতাংশ বাড়তি আছে। আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এত বাড়তি সক্ষমতা দিয়ে কী করা হবে?

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসানের অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায় পিডিবির খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরের বছর (২০২১-২২) এটি প্রায় ৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এটি ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লে এটি বাড়তেই থাকবে। ২০২৫ সালে অতিরিক্ত সক্ষমতা ৪৬ শতাংশ হবে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া কমানোয় জোর দেয়া উচিত।

সিপিডির নিবন্ধে আরও বলা হয়, শুল্ক ও কর বাবদ বিপিসি সরকারি কোষাগারে টাকা দিচ্ছে। আবার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প নিচ্ছে। অথচ লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে। এসব হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। দাম বাড়িয়ে বিপিসি মুনাফা করেছে। কিন্তু তা দিয়ে তো জ্বালানি তেল আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানির জন্য ডলার লাগবে। সামনে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়তে পারে। উচ্চমূল্যে কত দিন জ্বালানি কেনা সম্ভব হবে? গ্যাসঘাটতি উত্তরোত্তর বাড়ছে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মানে জ্বালানি আমদানি খরচের বড় অংশ যাবে এলএনজি খাতে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন বলেন, ‘একদিকে লোকসান, অন্যদিকে ফিক্সড অ্যাসেটে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়ার পাশাপাশি লোকসানের অজুহাতে জনগণের কাছ থেকে ট্যারিফ মূল্য বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এটা একটা গোলমেলে হিসেব। বিপিসি, পিডিবি ও পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।’

back to top