শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


কি ঘটেছিল সিলেটের ইসকন মন্দিরে? কী বলা হচ্ছে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

iscon2সিলেট থেকে জাহেদ আহমদ জেহিন
সিলেট নগরী র কাজল শাহ এলাকার মধু শহীদ জামে মসজিদ এর পাশেই ইসকন মন্দির। রাস্তার একপাশে মসজিদ অন্যপাশে মন্দির। মন্দিরে অনেক সময় বাদ্য যন্ত্র বাজানো হয়, এতে মসজিদের মুসল্লিদের নামাজে ব্যাঘাত ঘটে, এ নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তারপরও অনেক সময় তারা নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বাজায়। এতে নামাজ পড়তে সমস্যা হয় মুসল্লিদে। 
.
গতকাল এমন সমস্যা তৈরি হলে ক্ষিপ্ত হন মুসল্লিরা। মধু শহীদ এলাকার এক প্রত্যাক্ষদর্শী জানান, গতকাল জুমার নামাজের সময় মন্দিরে উচ্চস্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হচ্ছিল, যা মুসল্লিদের নামাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। মন্দিরের লোকজনকে মুসল্লিরা কিছুক্ষণের জন্য গান বাজনা বন্ধ করতে বললে তারা সেই অনুরোধ রাখেনি। তাই নামাজের পর মুসল্লিরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মন্দিরে গেলে তারা চটে যান। এক পর্যায়ে মন্দিরের ভেতর থেকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মুসল্লিরাও ইট পাটকেল মারলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। ইসকন ভক্তরা অস্ত্র (দা বটি) নিয়েও মুসল্লিদের উপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ এসে মুসল্লিদের উপর গুলি ছুড়তে থাকে। টিয়ার গ্যাসও নিক্ষেপ করে। এতে সাবেক কাউন্সিলর জেবুন্নাহার শিরিনসহ প্রায় ১২ জন মুসল্লি আহত হন। গুলিবিদ্ধ হন প্রায় ৭ জন। পথচারীসহ অনেকে ইট পাটকেল এর আঘাতে আহত হন। তবে পুলিশ এর জোরালো ভুমিকায় ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। পুলিশ মুসল্লিদের ধাওয়া করে প্রায় ১৫ জনকে আটক করে।  ঘটনার পর থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে মন্দিরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এতে সাবেক কাউন্সিলর জেবুন্নাহার শিরিনসহ প্রায় ১২জন মুসল্লি আহত হন। গুলিবিদ্ধ হন প্রায় ৭ জন। পথচারীসহ অনেকে ইট পাটকেল এর আঘাতে আহত হন।
এ ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া নানাভাবে প্রচার করছে। এতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে মুসলিমকে। প্রায় অধিকাংশ মিডিয়ায় একপেশে সংবাদ পরিবেশন করছেন। অথচ ঘটনা বিপরীত। এ বিষয়ে আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা আখতার আহমদ আওয়ার ইসলামকে জানান, ঘটনার পর থেকে মিডিয়ার মুসলিমদের বিপক্ষে লেখছে। অথচ নামাজের সময় গান না বাজালে হামলার সূত্রপাতই হতো না।
তিনি বলেন, সিলেটের কিছু অনলাইন ও কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা মুসল্লিদের উপর দায় চাপিয়ে খবর করেছে। তারা কৌশলে মন্দির থেকে অস্ত্র নিয়ে হামলার বিষয়টি এড়িয়ে মুসল্লিদের ইট পাটকের নিক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করছেন। আসল ঘটনা সাধারণ মানুষ জানতে পারছে না। মিডিয়ার এই ভূমিকায় আমরা হতাশ।
iscon3

এ ঘটনার পর তিন সদস্যের একটি কমিঠি গঠন করা হয়েছে।  তারা আটককৃত মুসল্লিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে বিষয়টি নিস্পত্তি করতে পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা উদ্যেগী হয়েছেন। গতকাল বিকেলে সিলেট স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে সিলেট প্রশাসন এর উদ্যেগে রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা ব্যাপী সমঝোতা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমেদ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্ল্যাহ জানান, ঘটনার তদন্তে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মাঈনুল হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিঠি গঠন করা হয়েছে। কমিঠিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিঠি ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করবে এবং সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আটককৃত মুসল্লিদের ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিলেটে অতীতে এ ধরনের ঘটনা বিরল। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত। ইসকনের ঘটনা উদ্দোশ্য প্রণোদিত কিনা এমন কথাও উঠেছে গতকালের ঘটনার পর। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট জামেয়া আমিনিয়া মংলিপার হাজীনগর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান আওয়ার ইসলামকে বলেন, সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ইসকন সম্প্রদায় মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়েছে। ধৈর্যের সাথে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা দরকার।

একই বিষয়ে অভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুখ:জনক। সিলেটের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হল।

প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান আওয়ার ইসলামকে বলেন, সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ইসকন সম্প্রদায় মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়েছে। ধৈর্যের সাথে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা দরকার।

তিনি বলেন, ইসকন সম্প্রদায় উস্কানি দিয়ে যে ঘটনা র জন্ম দিল তার মাধ্যমে তারা নিজেদের উগ্রবাদী হিসেবে পরিচয় দিল। তাদের মধ্যে সহনশীলতার কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

iskon

ঘটনাস্থল মধুশহীদ মসজিদের ইমাম মাওলানা শহীদ আহমদ জানান, গতকাল জুমার নামাজ শেষ করে সুন্নত আদায় করছিলাম তখন বাইরে চিল্লাচিল্লি শুনে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখি মন্দির থেকে ইট পাটকেল ছুড়ে মারছে। আবার ওদিক থেকে মুসল্লিরাও ইট পাটকেল মারছে। ঘটনার জন্য আমি দু পক্ষকে দায়ী করছি।

তবে ইসকনদের অনেক দিন থেকে নামাজের সময় গান বন্ধ রাখতে বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে জানান ইমাম শহীদ আহমদ। তিনি বলেন, তারা সচেতন হলে এই ঘটনা ঘটত না। এই রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে এই জন্য প্রশাসন ও মিডিয়ার শক্ত ভূমিকা দরকার।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ