নীতি প্রণয়নে মতৈক্য দরকার

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে গতকাল কথা বলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। তাই আর্থিক খাতের এই সংকট মোকাবিলায় দু-তিন বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতা প্রয়োজন। এই নীতি সমঝোতায় তিনটি বিষয় প্রাধান্য দিতে হবে। এগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা; উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখা এবং গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই আলাপচারিতা হয়। শিরোনাম ছিল, বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় একটি উত্তরণকালীন নীতি সমঝোতা খসড়া।

এই সমঝোতার জন্য একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণও তুলে ধরেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এ সময়ে নীতি প্রণয়ন মতৈক্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে যদি রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়, তখনো আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। কাদের সঙ্গে মতৈক্য—এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রথমে সরকারের নিজের মধ্যে আলোচনা করতে হবে। জাতীয় সংসদ, স্থায়ী কমিটি, মন্ত্রিপরিষদ—এসব জায়গায় আলোচনা করা উচিত। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সহযোগী ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক সমঝোতা হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না। এসব কারণে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা দরকার।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন অর্থনীতির প্রধান খলনায়ক হচ্ছে আর্থিক খাতের দুর্বলতা। কারণ, দীর্ঘদিন আর্থিক খাতে কোনো সংস্কার হয়নি। তারই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে। আর্থিক খাতের অযত্নের কারণে আমরা এগোতে পারছি না।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট রোগের উপসর্গ মাত্র। রোগ ভিন্ন জায়গায়। আর সেটি হলো সংস্কার না হওয়া। আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হচ্ছে।। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি বেশি দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

বাজেটের আগেই আর্থিক খাতের সংকটমোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেই কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এখন আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ যদি বলেন, আইএমএফের শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে; এর মানে দেশ নীতি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কোনো সরকারের জন্য এটি সম্মানজনক নয়। তবে এ ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রাক্‌-পদক্ষেপ নেওয়া হয়। জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধি ‘অনভিপ্রেত ও অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমান সংকট নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা অপরিপক্ব ও বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বলেন, কেউ বলছেন, দুই মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঠিক হয়ে যাবে। কেউ বলছেন, ২০২৪ সালের আগে ঠিক হবে না। এসব কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, নীতি প্রণয়নের মধ্যে রাজনীতিবিদেরা নেই, আমলানির্ভর নীতি প্রণয়ন হচ্ছে।