জ্বালানির দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হবে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ মার্চ ২০২২, ২২:২৫

এই মুহূর্তে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়লে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। এই চাপ সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানায় সিপিডি।

সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের সব দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তু বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো বাজার বিষয়ে দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা।

সভায় আলোচকরা বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় মূল্যস্ফীতি। গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী এবং এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

গবেষণা সংস্থাটির ভাষ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে। এরপরও কীভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকে, তা পরিষ্কার নয়।

সিপিডি মনে করে, মানুষের আয় বেড়েছে, কিন্তু যে হারে আয় বেড়েছে, তার তুলনায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।

সংস্থাটি বলেছে, চলতি অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি বাড়লেও চলতি লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি আছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, কারা এসব অপকর্ম করছে, সে বিষয়ে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য থাকলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

রমজান এলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ায়। এর জন্য আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী হলো সরকারের দুর্বল তদারকির ব্যবস্থা।

সিপিডি মনে করে, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচার রোধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যৌথভাবে নীতি তৈরি করতে হবে।

সিপিডি বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশীয় অর্থনীতিতে চাপ আরও বেড়েছে। এই চাপ মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ায়, তাহলে অর্থনীতিতে চাপ আসবে না। কারণ এই চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা আছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত যে ঘাটতি আছে, তা সহনীয়। এ ছাড়া সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ভর্তুকিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে কৌশলী হতে হবে। স্মার্ট বা চতুর নীতি গ্রহণ করতে হবে। চতুর ভর্তুকির অর্থ হলো যাদের জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন, সেই টার্গেট গ্রুপ যাতে ভর্তুকি পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত।’ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে; জিডিপি কমে যাবে। অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নামবে। সরকারের এ পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইউসুফসহ অনেকে।

ঢাকা টাইমস/২০ মার্চ/আরকেএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :