×

জাতীয়

নিত্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারের চেয়ে তিন গুণ বেশি : সিপিডি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ০৮:২৪ এএম

নিত্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারের চেয়ে তিন গুণ বেশি : সিপিডি

মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব বাস্তবতার সঠিক চিত্র নয় বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক আয় কম। তবুও সেসব দেশের চেয়েও বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে এ দেশের মানুষকে। বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব, চাহিদা-জোগান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাসহ একাধিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থাটি।

রবিবার (২০ মার্চ) সিপিডির এক মিডিয়া ব্রিফিং ও আলোচনা সভায় মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব নিয়ে এমন তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন- বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামীম, সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইউসুফ প্রমুখ।

গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সময় ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। কিন্তু সরকারি খাতায় খাদ্য-মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়ও কম। কিন্তু এটা বাস্তবতার তুলনায় সঠিক চিত্র নয়। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। এক একটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ১৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে স্থিতিশীল? গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকৃত মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে আয় ৫৩ শতাংশ কমে ৪৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে তিন ধরনের চালের (মিনিকেট, পাইজাম ও মোটাচাল) দাম বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, চালের বাজার ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বমুখী। একইভাবে ময়দা, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, গুঁড়া দুধ, ডিম ও মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি ফারাক। বিপরীতে আমরা দেখতে পাই, সিগারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক কম। সিপিডি জানায়, রপ্তানি বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় আমদানি বেশি বাড়ছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। কয়েকটি পণ্য আমাদের ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য। কৌশলের অংশ হিসেবে আগেভাগেই তেলের মজুত বাড়ানো যেতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটা আরো বেড়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, রমজান এলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ানো হয়। এ জন্য আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী হলো সরকারের দুর্বল তদারকির ব্যবস্থা।

বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সিপিডি যেসব সুপারিশ দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যবস্থা নেয়া, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি ও তদারকি বাড়ানো, রোজায় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিশ্চিত করতে টিসিবি ও ওএমএসের কার্যক্রম বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সিপিডি।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে; জিডিপি কমে যাবে। অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নামবে। সরকারের এ পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App