নির্বাচনের পর ইশতেহার ভুলে যায় রাজনৈতিক দল

‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপ। চট্টগ্রাম, ৫ মার্চছবি: প্রথম আলো

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু নির্বাচনের পর তা ভুলে যায়। এগুলো আসলে ইশতেহারের নামে  স্টান্টবাজি। এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিপালনের কথা থাকলেও তা বাস্তবে বাস্তবায়িত হয় না। আর দেশের উন্নয়ন হয়েছে বলা হলেও সে উন্নয়ন গুণগত মান ও তা সবার জন্য হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

আজ শনিবার দুপুরে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ড (ইউএনডিইএফ) যৌথভাবে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এখন যে উন্নয়ন হচ্ছে, এর চেয়ে আরও বেশি উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকার কারণে সে সময় উন্নয়ন বলতে কিছুই হয়নি। আর ইশতেহার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে জনপ্রতিনিধিদের ধরতে পারবে। এতে দুর্নীতি হবে না। সমালোচনা করবেন। তবে তা গ্রহণযোগ্য ও সঠিক হতে হবে। তিনি বলেন, দেশে নারী নির্যাতনের আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতনের আইন করা হয়নি। তাহলে কীভাবে সমতা হবে?

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর তা ভুলে যায়। তবে একটা অগ্রগতি হচ্ছে আগে যেনতেনভাবে ইশতেহার দেওয়া হতো, এখন একটা ডকুমেন্ট (নথি) হিসেবে তৈরির চেষ্টা করে। আর ইশতেহারের বিষয়ে জনগণকেও সচেতন করতে হবে। তাঁদের নিজেদের চাওয়াগুলো স্পষ্ট করতে হবে।

স্বাধীনতার পাঁচ দশকে দেশ অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। শিক্ষায় এগিয়েছে।

তবে এসব উন্নয়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার যে উন্নয়ন হচ্ছে বা হয়েছে, তা কি সবার জন্য হয়েছে? শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন কি আকাঙ্ক্ষিত পথে এগোতে পারছে? আর যে উন্নতি বা উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে জনগণের মধ্যে সমভাবে বণ্টিত হচ্ছে কি না। যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা শ্রমবাজারে চাকরি পাওয়ার মতো উপযুক্ত হচ্ছে কি না? অনেক যুবক বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পরও প্রত্যাশিত চাকরি পাচ্ছেন না।

সংলাপে আলোচকের বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ভোট চাওয়ার বিষয়টি চালু করা প্রয়োজন। ভোট চালু থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো ও জনপ্রতিনিধিরা জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো চট্টগ্রামের উন্নয়ন বলতে বোঝে উড়ালসড়ক।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখানো সহজ, তাই সরকার সে পথে গেছে। কিন্তু গুণগত উন্নয়ন হচ্ছে না।

অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, তিনি কখনো ইশতেহার দেখেননি। আর ইশতেহারের নামে এগুলো সব স্টান্টবাজি। চট্টগ্রামে শিক্ষার ভয়াবহ অবস্থা। মানুষ বাড়লেও সরকারি হাসপাতাল বাড়েনি। তাহলে এগুলো কিসের উন্নয়ন। রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের কথা ভুলে যায়। তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আনোয়ারা আলম বলেন, দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্পন্ন শিক্ষকসমাজের প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবস্থাপনা পর্ষদে শিক্ষানুরাগীরা কি আছেন? যাঁকে তাঁকে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়।

সংলাপে চট্টগ্রাম বিভাগের আয়, শ্রমবাজার, বেকারত্বের হার, শিক্ষার হার, বিদেশে কর্মসংস্থান, উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ের ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন সিপিডির যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য। সংলাপে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ঘাসফুলের চেয়ারম্যান মনজুর উল আমিন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফরিদুল আলম ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন।