RSS সন্ত্রাসীদের হামলা মুসলিমের বাড়ি তৈরি বন্ধ করতে, কাটা হলো মহিলার স্তন – হরিশচন্দ্রপুর, মালদা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG_20200623_225229

সাইফুদ্দিন মল্লিক : RSS-এর ফতোয়া হিন্দু গ্রামের পাশে মুসলিমদের বাড়ি তৈরি করা যাবে না। এমনি ফতোয়া বা আদেশ চলছে মালদার হরিশচন্দ্রপারের হাতিছাপা গ্রামের হাকিমী ডাক্তার নাইমুল হকে বাড়ি তৈরিতে বাঁধা দিয়ে বলা হয়, হিন্দু পড়ার পাশে মুসলিমদের বসবাস বা বাড়ি তৈরি করা যাবে না। এমন হুমকি কয়েকমাস আগে চলে আসছিল, জুন মাসে বাড়ি তৈরি শুরু করতেই হত্যা হুমকি আসতে শুরু হয়, বলে যায় বাড়ি তৈরি বন্ধ না হলে ফল মারাত্বক হবে। এবং ২০ জুন পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়ে হুমকির বাস্তবিক স্বরূপ দেওয়া হয়। পরশু ২১ জুন বিকালে ২০-২৫ জন RSS সন্ত্রাসী অস্ত্র হাতে হামলা চালায়।

মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্র পুর থানার অন্তর্গত দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিছাপার বাসিন্দা ডাঃ নাইমুল হক ইকবালপুর (বোরনাহী) গ্রামের শেষ মাথায় বটতলার পাশে এক হিন্দু ভাইয়ের থেকে বসত জমি ক্রয় করে ২০০৪ সালে। নাইমুল হকের অস্থায়ী ভাবে মাটির দুই কামরা মাটির বাড়ি করে থাকতেন উক্ত জায়গাতে। আশেপাশে দশ বিঘা জমি আছে নঈমুল সাহেবের। বিভন্ন রকম ফল ও সবজি চাষ করতেন উক্ত জমিতে। সব কিছু দেখাশুনার উদেশ্য নিয়ে মাঝে মাঝে উক্ত বাড়িতে বসবাস করতেন নইমুল সাহেব ও উনার পরিবার। সমস্ত রকম বৈধ কাগজ পত্র থাকার পরেও সেই জমিতে বাড়ি করতে দেবে না বলে RSS তাদেরকে মাঝেমধ্যে হুমকি দিতেন।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকা বাড়ি তৈরি কাজ শুরু করে। এর পর থেকে হিংস্র ও হুমকি শুরু হয়। গত পরশু ২০ জুন  সেখানে এসে শূন্য গুলিও চালায়, প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রশাসন কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি। গত পরশু ২১ জুন  সেখানে নাঈমুল হক এর ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) তার পিসি ও গর্ভবর্তী স্ত্রীকে নির্মিত (নির্মাণ কাজ চলছে) বাড়ি দেখতে যাই। সুযোগ বুঝে কয়েক ২০-২৫ জন দুষ্কৃতী সাদিকুল, সরজেমা বিবি (৫৫), সোনাভান খাতুন (২০) কে তালওয়ার হাঁসুয়া ভোজালি লোহার রড দিয়ে আক্রমণ করে। সাদিকুলের পিসির পেটের (নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যায়) ও ব্রেস্ট ( স্তন ) তালওয়ার দিয়ে কপিয়ে দেয়। সাদিকুলের হাত মাথাতেও ভোজালি ও তালওয়ার দিয়ে আক্রমণ করে। এমনকি দুষ্কৃতীদের হাত থেকে ছাড় পায়নি সাদিকুলের গর্ভবতী স্ত্রী সোনাভান বিবিও। তাদেরকে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করে ভালুকা গ্রামীণ হসপিটালে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত ডাক্তারবাবু মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করে। মালদা মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি সকলে। সরজেমা বিবির অবস্থা করুন। গলার চেন, মাটির বাড়িতে থাকা টাকা সব কিছু লুঠ করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

হরিশচন্দ্রপুরের ‘দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতর’ দুই( সর্ব গ্রাম ও দৌলতানগর) এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত অন্য এলাকা গুলি মুসলিম প্রধান। হিন্দু এলাকার দূরবর্তীতে ফাঁকা মাঠে বাড়ি তৈরি করছিলেন, উক্ত জায়গার একশো মিটারের মধ্যে চারটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি আছে। মূল বিষয়,  হিন্দু এলাকার পাশে মুসলিম বসতি নির্মান বা বসবাস চাইনা এক শ্রেনীর হিন্দুরা। উক্ত এলাকাতে মুসলিম পরিচালিত আবাসিক স্কুল “আল হিকমাহ ন্যাশানাল স্কুল” তৈরিতেও আপত্তি করা হয়েছিল।

ঘটনাটাতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন নইমুল সাহেব। একদিক আগে গুলি চালানোর ঘটনাতে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এমন ঘটনা আটকানো যেতো। সন্ত্রাসী ঘটনার পরে থানাতে গিলে প্রথমে FIR নিতে অস্বীকার করেন পুলিশ। পরে স্থানীয় মানুষের চাপে FIR  গ্রহন করেন পুলিশ। ১২ জন অভিযুক্তরা হলেন, নিখিল মন্ডল, মন্নু মন্ডল সুধীর মন্ডল, সুবোধ মন্ডল, কার্তিক মন্ডল, বেচন মন্ডল, গনেশ মন্ডল, অশোক মন্ডল, মঙ্গলু মন্ডল, বিমল মন্ডল, আশুতোষ মন্ডল, উৎপল মন্ডল। এরা সকলেই সর্ব গ্রামর বাসিন্দা।

উক্ত সন্ত্রাসী ঘটনার পর এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আজ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলাম। বিধায়ক সাহেব বলেন, “সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান বাংলা নাই। উক্ত ঘটনাতে যুক্ত সমস্থ ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি আবেদন করেন। তিনি বলেন ঘটনার সাথে যুক্ত এক হাই-স্কুলের শিক্ষক, ভাবতে অবাক লাগে  মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে মনে সাম্প্রদায়িক বিষ!” স্থানীয় মানুষ বলেন ঘটনার সাথে যুক্ত সকলে RSS কর্মী এবং বিজেপির সমর্থক ও কর্মী। বিজেপি পাটির মদত ছাড়া এতো সাহস হবে না, ওদের মাথা বিজেপির নেতা। তৃনমূল নেতা জম্মু রহমান এবং হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি বিক্ষোভরত জনতাকে আশ্বস্ত করে বলেন অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

গোবলয় উত্তত্তর প্রদেশ, গুজরাট, মধ্য প্রদেশ হরিয়ানা প্রভূতি রাজ্যে মুসলিম অত্যাচার  ঘটে। আজ বাংলাতে গোবলয়ের সাম্প্রদায়িক চলছে। গরুর নামে পিটিয়ে মারা, ট্রেনে- রাস্তাতে-বাসে জয় শ্রীরাম না বলাতে অত্যাচার, রাম নবমিতে মুসলিম হত্যা দিয়ে দাঙ্গা, হিন্দি ভাষী এলাকাতে মুসলিমদের অত্যাচার( কাকিনাড়া, ভদ্রেশ্বর), হিজাব নিয়ে  হেনস্থা, নতুন যুক্ত হলো বাড়ি করতে বাঁধা এবং সন্ত্রাসী হামলা। বিগত দুই বছরে ধর্মের কারনে আট মুসলিমকে হত্যা করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বিগত ছয় বছরে উগ্র হিন্দুত্ব সংগঠন RSS-এর সাড়ে তিনশো নতুন শাখা খুলেছে রাজ্যে।

শিক্ষা সংস্কৃতির মহানগর কলকাতাতেও ধর্মীয় বিভেদে ও হিংস্রতা বিষাক্ত ছোবল বিদ্যমান। মুসলিম বলে  স্টুডেন্ট থেকে ডাক্তার এবং প্রশাসনিক আমলাকেও বাড়ি ভাড়া না দেওয়া এবং ফ্লাট বিক্রিতে না, এমন বহু জায়গা আছে। সম্প্রতি লকডাউনে এক অমানবিক সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা হয়েছে যা অত্যন্ত ঘৃনার! হটাৎ লকডাউনে উত্তর বঙ্গের কলেজ ছাত্রী বাড়ি যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, দিশাহারা ছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসে হিন্দু বান্ধবী। ফ্লাটের ধর্মের মাতব্বর ও মৌলবাদীরা ফতোয়া দেয় মুসলিম মেয়েকে বাড়িতে রাখা যাবে না, চলে চলে যেতে হয় মেয়েটিকে।

এদিকে এমন কোন খবর বা অভিযোগ দেখতে পাওয়া যায়না, মুসলিম এলাকাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঘর ভাড়া ও  ক্রয়ে বাঁধা দেওয়া হয়েছে বা আপত্তি করা হয়। মুসলিম সমাজ ও সম্প্রদায়ের এলাকাতে নির্দ্ধিধায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে থাকে।

রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের সম্প্রীতির বাংলা, ভারতের শ্রেষ্ঠ হিন্দু মুসলিম ঐক্যের বাংলাতে গোবলয়ের ধর্মীয় রাজনীতি ও বিভেদের শিকড় তৈরি হয়েছে।  লকডাউনে ফেঁসে যাওয়া কাশ্মিরীকে বর্ধমানের হিন্দু পরিবার নিজের বাড়িতে ইফতার করানো, মসজিদ বন্ধে অন্য আর এক হিন্দু পরিবার নিজেদের বাড়িতে ঈদের জামাতা করায়। অন্যদিকে উলুবেড়িয়াতে, করোনা ভয়ে হিন্দুরা পাড়ার বৃদ্ধের সৎকার করতে না চাইলে, এলাকার মুসলিমরা সৎকার করেন। বাংলার সর্বত্র এমন সম্প্রীতির গড়ে উঠুক।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর