ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

নেপাল-শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোথাও তেলের দাম বাড়তি নেই: সিপিডি

অথনৈতিক রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ১০ আগস্ট ২০২২, বুধবার, ৩:২৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন

mzamin

চলতি বছরে তেল বিক্রি করে ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা লাভ করলেও ৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা লোকসানের কথা বলছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি)। এ ছাড়া ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। অন্যদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমছে অথচ আমাদের দেশে বৃদ্ধি করা হলো। কেউ বলছে আমাদের দেশ থেকে নাকি অন্যদেশে কম।  কিন্তু নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোথাও তেলের দাম বাড়তি নেই।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেছেন।

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ফাহমিদা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এই লাভ কীভাবে হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমছে অথচ আমাদের দেশে বৃদ্ধি করা হলো। কেউ বলছে আমাদের দেশ থেকে নাকি অন্যদেশে কম। আপনারা দেখতে পারেন নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোথাও তেলের দাম বাড়তি নেই।

ভিয়েতনাম উদীয়মান অর্থনীতির একটা দেশ অথচ দেখেন ভিয়েতনামে ডিজেলের লিটার প্রতি দাম ৯৭.৯ টাকা। আমরা কার সঙ্গে কী তুলনা করছি? আমরা বলছি হংকং এ নাকি জ্বালানি তেলের দাম আরও বেশি।

বিজ্ঞাপন
এটা ঠিক আছে। কিন্তু হংকং এ মাথাপিছু আয় ৪৯ হাজার ৬৬০ ডলার। আমাদের ২ হাজার ৫০৩ মার্কিন ডলার। সুতরাং কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করতে হলে মাথাপিছু আয়ও দেখতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। যাতায়াত ব্যবস্থার খরচ বেড়ে যাবে। বাসভাড়া, ট্রাক ও লঞ্চভাড়া বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে ভাড়া বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি খাতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অনেক কৃষক ডিজেলচালিত পাম্প ব্যবহার করেন। কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। ফলে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। এই মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ঘটনা। এটা এমন একটা সময় আসলো যখন কি না আমাদের অর্থনীতি বিভিন্ন ভাবে চাপে রয়েছে।

ফাহমিদা বলেন, বিপিসি এককভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেকে কোভিড থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তার উপরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সবাই চাপে পড়ছে। সাধারণ মানুষ ধাপে ধাপে নানাভাবে বিপদে পড়েছে। সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচবে? যারা দিন আনে দিন খায় তারা কীভাবে পোষাবে। এসব বিবেচনায় কিন্তু নেওয়া হয়নি।

ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য তুলে ধরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ১২৬ কোটি, ২০১৬ সালে ৯ হাজার ৪০, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৫৩, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। এছাড়া ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭৬৮, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৬৭ এবং ২০২১ সালে বিপিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা লাভ করেছ। বিপিসি সব সময় জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভ করেছে তাহলে এখন কেন ভর্তুকি তুলে নেয়া হলো?

তিনি বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকা সরকার নিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? শুনেছি প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু টাকা খরচ করছে। আমরা দেখছি বিপিসি নাকি সব থেকে ধনী গ্রাহক। বিপিসির ২৫ হাজার কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। তাহলে এসব টাকা কার? বিপিসি চাইলে এই সংকট সময়ে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে পারতো।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে খারাপ সময়ে আছি। এই সময়ে সরকার কিভাবে কোন কিছু না বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়ালো সেটা আমার বুঝে আসে না। জ্বালানি তেলে কর কমিয়েও সরকার দাম স্বাভাবিক রাখতে পারতো।

তিনি বলেন, সাবসিডি কেউই পছন্দ করে না। কিন্তু সরকার হঠাৎ করে জনগণের ওপর এত চাপ দেওয়ার চিন্তা কিভাবে করলো। আমরা যখন অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তখন এই দাম বাড়ানো হলো।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status