ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম বাতিল করে আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, গত সাত বছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) যে মুনাফা করেছে, তাতে বিদ্যমান লোকসানের চেয়ে লাভের অংক এখনো ভারী। সেই বিবেচনায় সংস্থাটি জ্বালানি তেলের আগের দামে ফিরে গেলে ভোক্তা উপকৃত হবে।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কতটুকু প্রয়োজন ছিল? শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তার ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষত গণপরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি হবে। এক পর্যায়ে সেটির প্রভাব সাধারণ মানুষকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর পর এখনো আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অনেক মানুষের আয় কমেছে, অনেকে কাজ হারিয়েছেন। দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিপিসির লোকসানের বিষয়টি উল্লেখ করে সিপিডির এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশি থাকায় সংস্থাটির ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এটা কমাতে তারা সরকারকে বিভিন্ন ধরনের যে শুল্ককর দেয়, তার মধ্যে যেকোনো একটি প্রত্যাহার করে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের হাতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক উপকরণ থাকে। দ্রব্যমূল্য বাড়লে সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিপিসির লোকসান কমাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা যৌক্তিক নয় বলে মনে করে সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিপিসিতে সুশাসনের অভাব রয়েছে, যা তাদের লোকসানের একটি কারণ। আবার বিপিসির ব্যবস্থাপনা, তেল সংগ্রহ ও বিপণন ব্যবস্থায়ও সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিপিসি যেসব কোম্পানির মাধ্যমে তেল বিপণন করে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, দাম নির্ধারণের মেকানিজমে আমরা বৈজ্ঞানিক কোনো মেথড দেখি না। আমরা যদি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কম থাকে, তখন সেটার সুফল কেন জনগণ পায় না? কেবল যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে, তখনই লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ানো হয়। এটা কোনো সঠিক যুক্তি হতে পারে না।
সিপিডি বলছে, জ্বালানি তেলের মূল্যস্ফীতির চাপ ধনীদের স্পর্শ করবে না। তবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অভিঘাত তৈরি হবে। তেলের মূল্যবৃদ্ধি সরকারের রাজনৈতিক ভুল। প্রণোদনা হিসেবেও এ ব্যয় সমন্বয় করা যেত। আর ধর্মঘট করে চাপ দিয়ে বাসের ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে নেয়া রাজনৈতিক দুর্বলতার ফল বলেও মনে করে সিপিডি।
সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি, রাজনৈতিকভাবেও এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।