২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলকদ ১৪৪৫
`
সিপিডির সেমিনারে অভিমত

বায়ুদূষণ রোধে ইটভাটা ও পলিথিন বন্ধ করা দরকার

-

রাজধানী ঢাকাতে মুক্ত জায়গা নেই। অভিজাত এলাকা গুলশান, বানানী ও বারিধারা লেকে আমি মাছ চাষ করতে পারছি না। সেখানে মশার চাষ হচ্ছে এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। আর বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন বলেছেন, ঢাকা শহরের আশপাশের ইটভাটা ও রাস্তায় উন্মুক্ত স্থানে রাখা নির্মাণসামগ্রী রাজধানীতে বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী। উন্নয়নকে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই সরকারের নীতির বাস্তবায়ন করা জরুরি। সিপিডি বলছে, ২০ বছরে বায়ুদূষণজনিত রোগবালাইয়ের কারণে মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। বায়ুদূষণে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। এ ছাড়া ১৫ বছরে প্লাস্টিক দূষণও বেড়েছে দ্বিগুণ। এর ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছে শহরাঞ্চলের মানুষ।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। আরো বক্তব্য রাখেন ইউনিলিভারের সিইও জাভেদ আক্তার, ব্র্যাকের পরিচালক লিয়াকত আলী, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) ড. দিবালোক সিংহ, এয়ার কোয়ালিটি বিশেষজ্ঞ মাসুদ রানা, ক্লাইমেট চেঞ্জের নাজনীন।
সিপিডির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ২৫ বছরে দেশের বায়ুদূষণ বেড়েছে ২৩ ভাগের মতো। এর ফলে শুধু রাজধানীতেই এক কোটির বেশি মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর সাড়ে ছয় শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আর স্বাস্থ্যসেবার পেছনে মানুষের মাথাপিছু ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৩৩৪ টাকা। শুধু বায়ুদূষণই নয়, প্লাস্টিক দূষণের কারণেও দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।


সেমিনারে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ৫৬ শতাংশ বায়ুদূষণে দায়ী ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। ইটভাটা বন্ধ করে সিমেন্টের ব্লক ব্যবহার করতে হবে। ইটের চেয়ে সেটার খরচও কম। তিনি বলেন, রোড ডাস্ট থেকে দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে ১৮ শতাংশ। যানবাহন থেকেও বায়ুদূূষণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ বন্ধ করতে আমাদেরকে স্কুল গাড়ির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব এবং সিসিটিভিযুক্ত স্কুলবাস ব্যবহার করতে হবে। সরেজমিন উদাহরণ দিতে গিয়ে মেয়র বলেন, সেদিন আমি মিরপুরে পরিদর্শনে যাই। দেখি পিডব্লিউডি ভবন নির্মাণকাজ করছে। আর রাস্তার ওপর রড ফেলে রেখেছে। সেই রডগুলোকে আমি নিলামের নির্দেশ দিলে প্রকল্প পরিচালক দৌড়ে আসেন। তাকে বলি কেন সে মানুষের চলাচলে রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখেছে? সরকারি নির্দেশনামা আপনার জানা নাই? এরপর ওই তিন কোটি টাকা মূল্যের রড ১৮ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রি করি তখনই। তিনি বলেন, রাজধানীর বড় বড় বিল্ডিংয়ে পাইলিংয়ের কাদা এবং পুরাতন বাড়ির টাইলসের গুঁড়া দিয়ে ড্রেনগুলো ভরে যাচ্ছে। এসব রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজধানীতে বাড়ির ছাদের ওপর কেউ যদি ছাদবাগান করে তাহলে তাকে ১০ শতাংশ রিবেট দেয়া হবে।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশে শিল্পায়ন খুব বড় আকারে হয়নি। তারপরও কেন এত বায়ুদূষণ? উন্নত দেশগুলোতে বড় আকারের শিল্পায়ন হলেও দূষণ এত কম কী করে হয়? তার মানে বায়ুদূষণের জন্য শিল্পায়নকে দায়ী করতে পারব না। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে ঢাকা শহরের আশপাশের ইটের ভাটা। রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য ঢাকা শহরের আশপাশে ইটভাটা সবচেয়ে বেশি দায়ী। ইটের ভাটার কারণে আকাশে দূষণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় উন্মুক্তভাবে নির্মাণ কাজ করা।


কংক্রিট ইটের ব্যবহার বৃদ্ধি ওপর জোর দিয়ে ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, কংক্রিট ইটে খরচ ও দূষণের পরিমাণ কমে যাবে। সে জন্য কংক্রিট ইটের কাঁচামালের বিষয়ে আলাদা করে এনবিআর বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। বর্তমানে ৬৯ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। আমাদের প্রস্তাব ছিল কাঁচামাল হিসেবে ৩ এমএম পাথরে ৫ শতাংশ শুল্ক করা। তাহলে ৭ থেকে ৮ টাকায় কংক্রিট ইট পাওয়া যাবে, যা সাধারণ ইটের চেয়ে ভালো। এটাকে প্রমোট করা দরকার। এখন যারা কংক্রিটের ইট বানাচ্ছে দাম বেশি পড়ে। তাই জনপ্রিয় হয় না। জনপ্রিয় পণ্য হওয়ার জন্য দাম বড় ভূমিকার রাখে। সেজন্য উৎপাদন খরচ কমাতেই হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের বর্জ্যব্যবস্থাপনা গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। না নিতে পারলে দূষণ আটকানো যাবে না। শহরে বাইরে দেখা যায় রাস্তার পাশে বর্জ্যরে স্তূপ। আর একটি হচ্ছে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা। খাল-বিল বন্ধ করে রাস্তা করে দেয়া হয়েছে। এক সময় ব্রিজ ছিল, রাস্তার সুবিধার জন্য কালভার্ট করে চিরদিনের জন্য নৌচলাচল বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, যানবাহনের দূষণ কমাতে হলে আমাদের ইলেকট্রিক বাহনের দিকে যেতে হবে। কিন্তু বর্তমানে ইলেকট্রিক কারের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রেখেছে বিআরটিএ, কাস্টমসে আলাদা এসএস কোডও নেই। আসলে যারা যেখানে কাজ করার কথা, তারা সেভাবে করছেন না।
ড. দিবালোক সিংহ বলেন, সিটি করপোরেশনের বাজেটে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ খুবই কম। যা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা ঠিকমতো ব্যবহার হয় না। বিশ^ব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এ খাতে মোট বাজেটের ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। তিনি মনে করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ভালো না করতে পারলে পরিবেশের বিপর্যয় আরো বাড়বে। প্রতিদিন ৪৭ হাজার টন সলিড ওয়েস্ট হচ্ছে। মেডিক্যাল ওয়েস্টের ব্যাপকতা হলো প্লাস্টিক। এটা সংগ্রহের প্রক্রিয়া আমাদের এখানে নেই।


আরো সংবাদ



premium cement