মির্জা ফখরুল : গুম-খুনের অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে

আগের সংবাদ

নানা ইস্যুতে চাপে রাখার কৌশল

পরের সংবাদ

ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা : বাজেটে সুবিধাবঞ্চিতদের প্রাপ্তির স্বচ্ছতা প্রয়োজন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনা অতিমারি জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। সমস্ত বিশ্ব যখন এ ক্ষত কাটিয়ে উঠছিল, ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশও সেই অনিশ্চয়তার ফল ভোগ করছে। বিশেষত, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষজন নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কী থাকছে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। গতকাল রবিবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) যুগ্ম পরিচালক (সংলাপ ও প্রচার) অভ্র ভট্টাচার্য। আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল প্রোগ্রামের পরিচালক (এডভোকেসি ও যোগাযোগ) টনি মাইকেল গোমেজ, সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, কর্ডএইডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শাকিব নবী, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. মোস্তফা আলী প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্য রাখেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচায।
সূচনা বক্তব্যে অভ্র ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন কারণে বর্তমান বাজেট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দুই বছর আগে উদ্ভূত অতিমারির অভিঘাত এখনো বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত, অতিমারির প্রভাব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া, বৈশ্বিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ও দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংলাপে বক্তারা বলেন, আসন্ন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা থাকা জরুরি। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান খাতে অতিমারির ফলে কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং কিভাবে সেটা পুষিয়ে নেয়া যায়, সেই বিষয়েও দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। উদ্ভূত সমস্যাগুলো নিরসনে ব্যাপক আকারে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আরো সুষ্ঠুভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উচিত। এ লক্ষ্যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার আগেই জনসাধারণের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত, যেন জনগণ সরাসরি তাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারেন। অর্থনীতির চাকা সচল করতে একটি সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন অতীব জরুরি। তাছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে জনগণকে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সরাসরি অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও খাদ্য প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে।
টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, অতিমারির জন্য শিশুদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বা দুর্গম জায়গাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই কারণে বিগত দুই বছরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে দুটোই বেড়েছে। বিভিন্ন কারণে যারা ঝরে পড়েছে, তাদের স্কুলে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই এই সমস্যাগুলোর নিরসনে শিশু বাজেট নতুন আঙ্গিকে প্রণয়ন করা দরকার। বাজেট প্রণয়নে শিশুদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।
খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের বাজেট বলতে শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের বাজেটকে বুঝায়। প্রতিবন্ধী মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক মাত্র ৭৫০ টাকা ভাতা দেয়া হয়, যা দৈনিক হিসাবে ২৫ টাকা। এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রতিবছর ভাতাপ্রাপ্যদের সংখ্যা বাড়লেও, ভাতার পরিমাণ বাড়ে না। আসন্ন বাজেটে তাই প্রতিবন্ধী মানুষদের সুরক্ষা বেষ্টনী টাকার অঙ্কে বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায়ন সুস্পষ্ট নয়। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর অতীতে কখনোই কোনো শুমারি পরিচালিত হয়নি। ফলে, তাদের দাবি ও চাওয়া-পাওয়া হিসাবের বাইরেই রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেন। যেমন- ট্রান্সজেন্ডারদের স্বল্প সুদে ব্যবসায়িক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা, তাদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্যে নিয়োগদাতাদের সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্রদান, ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করতে তাদের পরিবারদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
শাকিব নবী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা বর্তমানে অনানুষ্ঠানিকভাবে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। ফলে তারা সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সামগ্রিক কৃষি কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।
মো. মোস্তফা আলী বলেন, কৃষি নিয়ে সরকারের আরো পরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। অঞ্চলভেদে প্রয়োজনীয় কৃষি কর্মকর্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই এসব সমাধান করতে কৃষিসংক্রান্ত সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়