ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক বিবেচনায় তেলের মূল্যবৃদ্ধি সঠিক হয়নি

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১১ নভেম্বর ২০২১

অর্থনৈতিক বিবেচনায় তেলের মূল্যবৃদ্ধি সঠিক হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জ্বালানির সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধি জনগণের ব্যয়ের বোঝাকে আরো তীব্র করে তুলবে। ইতোমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করতে ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের বোঝা কমাতে সরকারকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে আহŸান জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং রাজনৈতিকভাবে এটা কোন আলোকিত সিদ্ধান্ত নয়। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ভর্তুকির অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কতটুকু প্রয়োজন ছিল?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার সিপিডির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ এবং অভিমত তুলে ধরা হয়। মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিত মূল্যায়ন করেছে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা’ দল। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য জানিয়ে দলটির তৈরি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, জ্বালানি তেল একটি কৌশলগত পণ্য। অর্থনীতির নানা খাতে এর সরাসরি প্রভাব আছে। করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানো যৌক্তিক হয়নি। শুল্ক প্রত্যাহার করে বা ভর্তুকি দিয়ে বিপিসির ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। অর্থনীতির জন্য বোঝা তৈরি হলে বিভিন্ন দেশের সরকার এটি করে থাকে। আগামী বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে এলে দেশে সঙ্গে সঙ্গে দাম না কমিয়ে বিপিসি এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারত। সিপিডির সুপারিশে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হয়। তাই দেশেও মূল্য সমন্বয়ের প্রক্রিয়া ঠিক করা দরকার। এর সঙ্গে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) যুক্ত করা দরকার। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুনাফার টাকা বিপিসির হাতে থাকলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। উদ্ধৃত অর্থ সরকার নিয়ে যাওয়ায় বিপিসি সক্ষমতা হারিয়েছে। আবার তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে অযৌক্তিকভাবে বেশি হারে পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ছিল। সিপিডির নিবন্ধে আরও বলা হয়, বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লঞ্চে ভাড়া বেড়েছে। বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। কৃষি উৎপাদনেও খরচ বেড়ে যাবে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। করোনার প্রভাবে মানুষের আয় কমেছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের চড়া দামের কারণে আগে থেকেই ভোক্তারা চাপে আছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সরকারীভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির যে তথ্য দেয়া হয়, তা বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই। সব মিলে সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের জ্বালানি তেলের সঙ্গে তুলনা করে সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সিপিডির কাছে জানতে চাইলে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রাজনৈতিকভাবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। দেশে বিদ্যমান সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্য কাঠামোর সঙ্গে হঠাৎ অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না।
×